Daily Ittefaq
|
অন্যান্য
কুমিল্লায় পানি–পয়েন্টে বদলে গেছে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন, কমেছে নারীদের হয়রানি
প্রকাশিত হয়েছে: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০৩:০৪ অপরাহ্ণ
নিরাপদ পানি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম মৌলিক চাহিদা। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন ও ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন ফর দ্য আরবান পপুলেশন (টিসিসিএফ-ডাব্লিউএসইউপি) বাস্তবায়িত পানি–পয়েন্ট প্রকল্প বদলে দিয়েছে হাজারো মানুষের জীবনমান।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পদুয়ারবাজার রোডের দিশাবন্ড কমিউনিটি ও থিরা পুকুরপার এলাকাসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে—এই পানি–পয়েন্ট নারীদের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। আগে নিরাপদ পানি সংগ্রহ ছিল কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। খোলা পুকুর, দূরের টিউবওয়েল কিংবা রাস্তার ধারের স্ট্যান্ডপাইপে পানি আনতে গিয়ে নারীদের পড়তে হতো ভিড়, অনিরাপত্তা ও হয়রানির মুখে। এখন ঘরের কাছেই পানি–পয়েন্ট থাকায় কমেছে সময়, ঝুঁকি ও দুর্ভোগ।দিশাবন্ড কমিউনিটির সদস্য মাজেদা বেগম, নাজমা আক্তার ও খোদেজা বেগম জানান, আগে প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনতে হতো।
দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে হতো পুকুরের নোংরা পানি। মাজেদা বেগম বলেন, “আগে সকাল–বিকেল পানি আনতেই সময় শেষ হয়ে যেত। এখন বাসার পাশেই পানি পাই। পুকুরের নোংরা পানি দিয়ে গোসল বা কাপড় ধোয়ার দিন শেষ। সময় বাঁচায় এখন বেশি কাজ করতে পারছি।”
৬০ বছর বয়সী খোদেজা বেগম বলেন, “বয়স হয়েছে, শরীর ভালো না। দূরে পানি আনতে যাওয়া খুব কষ্টকর ছিল। এখন পরিষ্কার পানি হাতের কাছেই। জীবনটা অনেক সহজ হয়ে গেছে।”
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গত প্রায় দুই বছরে কুমিল্লা সিটি এলাকায় দেড় শতাধিক পানি–পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। আগে মাত্র ১১ শতাংশ পরিবার নির্দিষ্ট সময়ে পানি পেত, বর্তমানে ৭৭ শতাংশ পরিবার ২৪ ঘণ্টা নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে পারছে।
স্থানীয়দের হিসাব অনুযায়ী, পানি–পয়েন্ট স্থাপনের ফলে নারীরা প্রতিদিন অন্তত ১ থেকে ২ ঘণ্টা সময় সাশ্রয় করছেন। ফলে বেড়েছে পারিবারিক উৎপাদনশীলতা। নিরাপদ পানির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। প্রকল্প এলাকায় পানিবাহিত রোগের হার ৪২ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২ শতাংশের নিচে।
দিশাবন্ড এলাকার দুটি পানি–পয়েন্ট থেকে বর্তমানে ৪০টি পরিবার নিয়মিত পানি পাচ্ছে। উপকারভোগী তিন শতাধিক মানুষ। স্থানীয়দের মতে, নিরাপদ পানি পাওয়ায় শিশু ও নারীদের অসুস্থতা কমেছে, কমেছে চিকিৎসা ব্যয় ও সময় অপচয়। অনেক পরিবার জানান, মেয়েদের স্কুলে অনুপস্থিতিও কমেছে।
থিরা পুকুরপার কমিউনিটিতে আগে পানি আনতে গিয়ে নারীরা ও কিশোরীরা নিয়মিত ইভটিজিংয়ের শিকার হতেন। পানি–পয়েন্ট স্থাপনের পর সেই হয়রানি বন্ধ হয়েছে।
কমিউনিটি নেতা নূরজাহান বেগম ডলি বলেন, “আগে মেয়েরা ভয়ে পানি আনতে যেত না। এখন তারা নিরাপদে ও নির্ভয়ে পানি নিতে পারে।”
রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির প্রধান রিনা আক্তার জানান, “কমিউনিটির মানুষ নিজেরাই পানি–পয়েন্টের দেখভাল করছে। নষ্ট হলে কীভাবে ঠিক করতে হয় তার প্রশিক্ষণ আমরা পেয়েছি। টুলবক্সও দেওয়া হয়েছে।”
ডাব্লিউএসইউপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার উত্তম কুমার সাহা বলেন, “এই পানি–পয়েন্টগুলো শুধু পানির উৎস নয়, বরং নিম্ন আয়ের মানুষের সামাজিক পরিবর্তনের ভিত্তি। নিরাপদ পানি পাওয়ায় নারীদের হয়রানি কমেছে, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমেছে।”
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ (পানি সরবরাহ) বলেন, “পুরো সিটি এলাকায় পাইপলাইনে পানি দেওয়ার সক্ষমতা এখনো নেই। এই প্রকল্প সিটির পানি ব্যবস্থাপনায় একটি সফল মডেল।”
জেলা মাস্টার ট্রেইনার ও ডিসি অফিস জামে মসজিদের প্রধান খতিব মাওলানা নোমান আলমগীর বলেন, “নিরাপদ পানি শুধু স্বাস্থ্যের জন্য নয়, ধর্মীয়ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্প মানুষের উপকার করছে।”
এই প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা সিটির কয়েকটি স্কুলেও নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি ও পানিবাহিত রোগ কমেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। নিরাপদ পানি ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশ—এই দুই সুবিধা নারীদের স্বাস্থ্য, স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করছে। কুমিল্লার এসব এলাকায় পানি–পয়েন্ট স্থাপন সত্যিকার অর্থেই এক সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পদুয়ারবাজার রোডের দিশাবন্ড কমিউনিটি ও থিরা পুকুরপার এলাকাসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে—এই পানি–পয়েন্ট নারীদের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে। আগে নিরাপদ পানি সংগ্রহ ছিল কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। খোলা পুকুর, দূরের টিউবওয়েল কিংবা রাস্তার ধারের স্ট্যান্ডপাইপে পানি আনতে গিয়ে নারীদের পড়তে হতো ভিড়, অনিরাপত্তা ও হয়রানির মুখে। এখন ঘরের কাছেই পানি–পয়েন্ট থাকায় কমেছে সময়, ঝুঁকি ও দুর্ভোগ।দিশাবন্ড কমিউনিটির সদস্য মাজেদা বেগম, নাজমা আক্তার ও খোদেজা বেগম জানান, আগে প্রায় দুই কিলোমিটার দূর থেকে পানি আনতে হতো।
দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে হতো পুকুরের নোংরা পানি। মাজেদা বেগম বলেন, “আগে সকাল–বিকেল পানি আনতেই সময় শেষ হয়ে যেত। এখন বাসার পাশেই পানি পাই। পুকুরের নোংরা পানি দিয়ে গোসল বা কাপড় ধোয়ার দিন শেষ। সময় বাঁচায় এখন বেশি কাজ করতে পারছি।”
৬০ বছর বয়সী খোদেজা বেগম বলেন, “বয়স হয়েছে, শরীর ভালো না। দূরে পানি আনতে যাওয়া খুব কষ্টকর ছিল। এখন পরিষ্কার পানি হাতের কাছেই। জীবনটা অনেক সহজ হয়ে গেছে।”
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, গত প্রায় দুই বছরে কুমিল্লা সিটি এলাকায় দেড় শতাধিক পানি–পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে। আগে মাত্র ১১ শতাংশ পরিবার নির্দিষ্ট সময়ে পানি পেত, বর্তমানে ৭৭ শতাংশ পরিবার ২৪ ঘণ্টা নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে পারছে।
স্থানীয়দের হিসাব অনুযায়ী, পানি–পয়েন্ট স্থাপনের ফলে নারীরা প্রতিদিন অন্তত ১ থেকে ২ ঘণ্টা সময় সাশ্রয় করছেন। ফলে বেড়েছে পারিবারিক উৎপাদনশীলতা। নিরাপদ পানির কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। প্রকল্প এলাকায় পানিবাহিত রোগের হার ৪২ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২ শতাংশের নিচে।
দিশাবন্ড এলাকার দুটি পানি–পয়েন্ট থেকে বর্তমানে ৪০টি পরিবার নিয়মিত পানি পাচ্ছে। উপকারভোগী তিন শতাধিক মানুষ। স্থানীয়দের মতে, নিরাপদ পানি পাওয়ায় শিশু ও নারীদের অসুস্থতা কমেছে, কমেছে চিকিৎসা ব্যয় ও সময় অপচয়। অনেক পরিবার জানান, মেয়েদের স্কুলে অনুপস্থিতিও কমেছে।
থিরা পুকুরপার কমিউনিটিতে আগে পানি আনতে গিয়ে নারীরা ও কিশোরীরা নিয়মিত ইভটিজিংয়ের শিকার হতেন। পানি–পয়েন্ট স্থাপনের পর সেই হয়রানি বন্ধ হয়েছে।
কমিউনিটি নেতা নূরজাহান বেগম ডলি বলেন, “আগে মেয়েরা ভয়ে পানি আনতে যেত না। এখন তারা নিরাপদে ও নির্ভয়ে পানি নিতে পারে।”
রক্ষণাবেক্ষণ কমিটির প্রধান রিনা আক্তার জানান, “কমিউনিটির মানুষ নিজেরাই পানি–পয়েন্টের দেখভাল করছে। নষ্ট হলে কীভাবে ঠিক করতে হয় তার প্রশিক্ষণ আমরা পেয়েছি। টুলবক্সও দেওয়া হয়েছে।”
ডাব্লিউএসইউপি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার উত্তম কুমার সাহা বলেন, “এই পানি–পয়েন্টগুলো শুধু পানির উৎস নয়, বরং নিম্ন আয়ের মানুষের সামাজিক পরিবর্তনের ভিত্তি। নিরাপদ পানি পাওয়ায় নারীদের হয়রানি কমেছে, স্বাস্থ্যঝুঁকি কমেছে।”
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইউসুফ (পানি সরবরাহ) বলেন, “পুরো সিটি এলাকায় পাইপলাইনে পানি দেওয়ার সক্ষমতা এখনো নেই। এই প্রকল্প সিটির পানি ব্যবস্থাপনায় একটি সফল মডেল।”
জেলা মাস্টার ট্রেইনার ও ডিসি অফিস জামে মসজিদের প্রধান খতিব মাওলানা নোমান আলমগীর বলেন, “নিরাপদ পানি শুধু স্বাস্থ্যের জন্য নয়, ধর্মীয়ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্প মানুষের উপকার করছে।”
এই প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা সিটির কয়েকটি স্কুলেও নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি ও পানিবাহিত রোগ কমেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। নিরাপদ পানি ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশ—এই দুই সুবিধা নারীদের স্বাস্থ্য, স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করছে। কুমিল্লার এসব এলাকায় পানি–পয়েন্ট স্থাপন সত্যিকার অর্থেই এক সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।