Prothom Alo Prothom Alo | সম্পাদকীয়

এনসিটিবিকে বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে

প্রকাশিত হয়েছে: ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০৯:১৫ পূর্বাহ্ণ
এনসিটিবিকে বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে
চলতি শিক্ষাবর্ষের তিক্ত অভিজ্ঞতার পরও নতুন শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরের বই জানুয়ারির শুরুতে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো নিয়ে যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক। শিক্ষাবর্ষ শুরুর দুই সপ্তাহও বাকি নেই, অথচ মাধ্যমিকের ৬৭ শতাংশ পাঠ্যবই এখনো সরবরাহ করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনিসিটিবি)। এর অর্থ, আগামী বছরও বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী নতুন বই ছাড়াই তাদের শিক্ষাবর্ষ শুরু করবে।প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, কাগজের সংকট, চুক্তি করতে দেরিসহ বিভিন্ন কারণে মাধ্যমিক স্তরের সব বই বছরের শুরুতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনসিটিবি কর্মকর্তা ও মুদ্রণকারী শঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সব বই জানুয়ারির মধ্যে সরবরাহ না–ও শেষ হতে পারে।বিদায়ী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের কাছে সব বই পৌঁছে দিতে প্রায় তিন মাস লেগে যায়। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। সরকারকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। এই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর এনসিটিবি আগেভাগেই পাঠ্যপুস্তক ছাপানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। আশার কথা হচ্ছে, নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই প্রাথমিকের সব বই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে যাবে। মাধ্যমিকে নবম শ্রেণির বইও শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যাবে।

নভেম্বরের মধ্যেই পাঠ্যবই ছেপে মাঠপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল এনসিটিবি; কিন্তু তা পূরণে তারা সফল হতে পারেনি। ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই ছাপার দরপত্র নভেম্বর মাসে এসে বাতিল করে সরকার। আবার দরপত্র আহ্বান করে বই ছাপানোর কারণেই বই পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এনসিটিবি কি দরপত্র আহ্বান ওকার্যাদেশ দেওয়ার সময় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিল? এনসিটিবি কিংবা সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন কেন ক্ষতিগ্রস্ত হবে?শিক্ষক–সংকট ও শিক্ষকদের বেতন–ভাতা মানসম্মত না হওয়াসহ মাধ্যমিক শিক্ষা নানামুখী সংকটে ভুগছে। সম্প্রতি মাউশির করা এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিত ও ইংরেজিতে দুর্বলতা বেড়েছে। সামগ্রিকভাবে বনিয়াদি শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ স্তর মাধ্যমিক শিক্ষার মান নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মান যেনতেন হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা কোচিং ও গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। ফলে শিক্ষায় যেমন ব্যয় বাড়ছে, একইভাবে বৈষম্য বাড়ছে।

করোনা মহামারির কারণে বর্তমান শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের মধ্যে শিখনঘাটতি তৈরি হয়েছে। শিক্ষাবিদদের সুনির্দিষ্ট পরামর্শের পরও সেটা কাটিয়ে ওঠাতে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই পৌঁছানোতে দেরি হওয়াটা কোনো যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য নয়।বাংলাদেশে পাঠ্যবই ও পাঠ্যক্রম নিয়ে যেভাবে পরীক্ষা–নিরীক্ষা চলে, তার নজির বিশ্বে বিরল। মূলত রাজনৈতিক কারণে শিক্ষার্থীদের এভাবে গিনিপিগ বানানোর যে ধারা, তার অবসান হওয়া জরুরি। এনসিটিবি নভেম্বরের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক ছাপানো ও সরবরাহের জন্য যে লক্ষ্য ঠিক করেছে, যেকোনো মূল্যেই সেটা বাস্তবায়ন করতে হবে।মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সব পাঠ্যবই যেন শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানো যায়, এনসিটিবিকে তার জন্যবাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছাতে দেরি হলে সেটা শুধু তাদের শিক্ষাজীবনই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আস্থার সংকটও তৈরি হয়।