Prothom Alo Prothom Alo | বাণিজ্য

মাঠে সার-কীটনাশক দিচ্ছে ড্রোন, সময় লাগে কম, খরচেও সাশ্রয়ী

প্রকাশিত হয়েছে: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১০:১৫ অপরাহ্ণ
মাঠে সার-কীটনাশক দিচ্ছে ড্রোন, সময় লাগে কম, খরচেও সাশ্রয়ী
- দেশের কৃষিতে নতুন দিগন্ত খুলছে ড্রোন প্রযুক্তি।- এক বিঘা জমিতে কীটনাশক দিতে লাগে মাত্র ৩-৫ মিনিট। খরচও কম।- স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে আধুনিক চাষাবাদের সুযোগ।

কৃষিকাজেও প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সনাতনী পদ্ধতির কাস্তে দিয়ে  ধান বা শস্য কাটার বদলে এখন হারভেস্টারের সাহায্যে একসঙ্গে কাটা, মাড়াই ও ঝাড়াই—তিনটি কাজই করা যাচ্ছে। ড্রোন দিয়ে কীটনাশক ও সার প্রয়োগের অত্যাধুনিক যান্ত্রিক পদ্ধতিও এসে গেছে।কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকেরা জানান, ড্রোনের সাহায্যে করলে জমিতে পরিমিত মাত্রায় সার–কীটনাশক ছিটানো যায়। এতে কৃষকের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিও এড়ানো সম্ভব। এক বিঘা জমিতে কীটনাশক ছিটাতে একজন মানুষের যেখানে দুই ঘণ্টা সময় লাগে, সেখানে ড্রোনের লাগে মাত্র পাঁচ মিনিট, খরচও কম পড়ে।জিনিয়াস ফার্মস লিমিটেড ও ফ্লাইমেক নামের দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে প্রাথমিকভাবে মাঠপর্যায়ে ড্রোনের মাধ্যমে কীটনাশক প্রয়োগ করছে। এতে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। চীনের যন্ত্রাংশ দিয়ে দেশে তৈরি এসব ড্রোন পাঁচ কেজি ওজনের কীটনাশক বহনে সক্ষম।

নরসিংদীর বেলাব উপজেলা ও মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলায় কৃষকদের স্থানীয় দুটি সমিতির মাধ্যমে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। আপাতত দুটি ড্রোন দিয়ে নির্দিষ্ট ফির বিনিময়ে কৃষকেরা এ সেবা নিতে পারছেন। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএমই মেলায় এই ড্রোন প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হয়।ড্রোনের মাধ্যমে মাঠে কীটনাশক দেওয়ার সুবিধা সম্পর্কে জানতে চাইলে জিনিয়াস ফার্মসের কৃষি বিভাগের প্রধান সমীরণ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ড্রোনের সাহায্যে প্রতি বিঘা জমিতে কীটনাশক দিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা নেওয়া হয়। আর কৃষিশ্রমিকের মাধ্যমে খরচ হয় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকার মতো। এ কাজে একজন মানুষের দুই ঘণ্টা লাগে। অথচ ড্রোনে মাত্র তিন থেকে পাঁচ মিনিটে কাজটি করা যায়।জানা গেছে, বর্তমানে আলোচ্য দুই উপজেলার প্রায় ২০০ কৃষকের ৫০ থেকে ৬০ একর জমিতে এই আধুনিক প্রযুক্তিতে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে।এদিকে সাভারের বিরুলিয়াতেও একই কাজে ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে। এ নিয়ে কৃষক মোক্তার হোসেন জানান, রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ড্রোন চালিয়ে জমিতে কীটনাশক দেওয়া হয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে কীটনাশক প্রয়োগের দিন শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। মাস্ক ব্যবহার করলেও ক্ষতি হয়। কিন্তু যন্ত্র দিয়ে স্প্রে করলে সেই ঝুঁকি কম মনে হয়। তা ছাড়া প্রতি বিঘা জমিতে কীটনাশক দিতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে।

জিনিয়াস ফার্মস লিমিটেড ও ফ্লাইমেকের কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা ভবিষ্যতে ড্রোনের মাধ্যমে কীটনাশক প্রয়োগকে একটি ব্যবসায়িক মডেলে রূপ দিতে চান। সে অনুযায়ী, গ্রামে কৃষক সমিতির মাধ্যমে ড্রোন পরিচালনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা গেলে একটি ড্রোনে মাসে দুই থেকে তিন লাখ টাকা ভাড়া পাওয়া যেতে পারে।

প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তারা জানান, হাতে প্রয়োগ করলে বেশি সময় লাগে। আবার কীটনাশকের ব্যবহারও হয় বেশি। ড্রোনে জিপিএসের মাধ্যমে কীটনাশকের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ড্রোন না কিনেও ভাড়ায় সেবা নিতে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক কৃষক। একটি লাভজনক ব্যবসায়িক মডেল দাঁড় করানো গেলে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোও বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হবে।ফ্লাইমেকের কর্মকর্তারা জানান, কৃষিতে ব্যবহৃত এসব ড্রোন এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। ফলে তা তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় পাওয়া যায়। বিশেষ করে ড্রাগনবাগানে গাছে বেশি কাঁটা থাকায় হাতে কীটনাশক দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে ড্রোন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

ফ্লাইমেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাওয়াদ রশিদ প্রথম আলোকে জানান, তাঁরা ড্রোন বিক্রিও করেন। কেউ চাইলে অর্ধেক মূল্য, অর্থাৎ পৌনে দুই লাখ টাকা জমা দিয়ে ড্রোন নিতে পারবেন। বাকি টাকা পরে সার্ভিস ফি থেকে পরিশোধ করা যাবে। আগামী বছর থেকে ফ্লাইমেক পুরোদমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করবে। পাশাপাশি ড্রোনের কীটনাশক বহনের সক্ষমতা ১০ থেকে ২০ লিটারে উন্নীত করার কাজ চলছে বলে জানান তিনি।তবে দেশে কৃষিজমির আকার তুলনামূলক ছোট হওয়ায় ড্রোন ওড়ানো একটু কঠিন। সে জন্য কয়েকটি জমির কৃষক একসঙ্গে ড্রোন ব্যবহার করলে সুবিধা পাওয়া যাবে।জিনিয়াস ফার্মস মূলত একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান। কৃষিতে প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে কাজ করছে তারা। ‘ডাক্তার চাষি’ নামের একটি ফ্রি অ্যাপের মাধ্যমে ৪১টি প্রধান ফসলের রোগ ও কীটনাশক ব্যবহারের পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

এ ছাড়া ‘ড্রোন বাংলাদেশ’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানও কৃষিকাজে ব্যবহারের উপযোগী ড্রোন বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত অস্ট্রেলিয়ার তৈরি ডিজিআই ড্রোন বাজারজাত করে। ২০১৫ সাল থেকে দেশে ড্রোন বিক্রি করছে তারা। তবে এখনো সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণা ও প্রকল্পের কাজেই মূলত এসব ড্রোন বেশি ব্যবহার করছে বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানান।ড্রোন বাংলাদেশের স্বত্বাধিকারী কামরান আহমেদ জানান, তাঁদের কাছে ১৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা দামের ড্রোন রয়েছে। ২০ থেকে ৩০ লিটার, এমনকি ১০০ লিটার কীটনাশক বহনে সক্ষম ড্রোনও আছে। তবে দেশে ১০ লিটারের ছোট ড্রোনের চাহিদা বেশি। ভবিষ্যতে নিজস্ব অ্যাসেম্বল প্ল্যান্ট বা সংযোজন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করছেন বলে জানান এ উদ্যোক্তা।