Prothom Alo Prothom Alo | জেলা

চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে দিপু দাসকে উত্তেজিত জনতার কাছে তুলে দেওয়া হয়: র‍্যাব

প্রকাশিত হয়েছে: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০৮:৫১ অপরাহ্ণ
চাকরি ছাড়তে বাধ্য করে দিপু দাসকে উত্তেজিত জনতার কাছে তুলে দেওয়া হয়: র‍্যাব
ময়মনসিংহের ভালুকায় হত্যাকাণ্ডের শিকার পোশাক কারখানার শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে (২৭) চাকরি ছাড়তে বাধ্য করার পর উত্তেজিত জনতার কাছে তুলে দেন কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ। পরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে পিটিয়ে হত্যার পর তাঁর মরদেহে আগুন দেওয়া হয়।আজ শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহে র‍্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। এ ঘটনায় সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ ও ভিডিও দেখে পৃথকভাবে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব ও পুলিশ। এর মধ্যে র‍্যাব সাতজনকে এবং পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

র‍্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার সাতজন হলেন ভালুকার হবিরবাড়ী ইউনিয়নের ডুবালিয়াপাড়া এলাকার পাইওনিয়ার্স নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন (৩৮), কোয়ালিটি ইনচার্জ মো. মিরাজ হোসেন আকন (৪৬), কারখানার শ্রমিক মো. তারেক হোসেন (১৯), মো. লিমন সরকার (২২), মো. মানিক মিয়া (২০), এরশাদ আলী (৩৯) ও নিঝুম উদ্দিন (২০)। পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ভালুকার বাসিন্দা মো. আজমল হাসান (২৬) ও মো. শাহিন মিয়া (১৯) এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মো. নাজমুল (২১)।পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ তুলে গত বৃহস্পতিবার রাতে পাইওনিয়ার্স নিটওয়্যারস (বিডি) লিমিটেড কারখানার কর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে কারখানা থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। একপর্যায়ে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভাজকের একটি গাছে বিবস্ত্র করে ঝুলিয়ে মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় নিহত দিপুর ছোট ভাই গতকাল শুক্রবার ভালুকা থানায় একটি মামলা করেন।

আজ বেলা একটায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব–১৪ ময়মনসিংহের অধিনায়ক নয়মুল হাসান বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত হয় সেদিন (বৃহস্পতিবার) বিকেল চারটার দিকে। কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ তাঁকে (দিপু) চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে উত্তেজিত জনতার কাছে হস্তান্তর করেন। পুলিশের কাছে কেন হস্তান্তর করেনি এবং তাঁর নিরাপত্তা কেন নিশ্চিত করা হয়নি, সে কারণে কারখানার সংশ্লিষ্ট দুই কর্মীকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি।’র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার বিষয়টি খুবই অস্পষ্ট। তিনি কী বলেছেন, এটি খোঁজার চেষ্টা করলেও কেউ এটি বলতে পারেনি। কারও সঙ্গে পূর্বশত্রুতা ছিল কি না, সেটি আমরা তদন্ত করে দেখব। ঘটনার সূত্রপাত কার সঙ্গে হয়েছে, সেটি শনাক্ত করা যায়নি। আমরা জানতে পেরেছি, কাজ করার সময় ফ্লোরেই বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয় এবং তাঁকে কোনোভাবেই আর কারখানার ভেতরে রাখা যাচ্ছিল না। ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা আসামিদের ধরেছি। কী কারণে ঘটনা ঘটেছে, তা উদ্‌ঘাটন ও জড়িত সবাইকে ধরতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।’

র‍্যাব হেফাজতে থাকা কারখানার ফ্লোর ইনচার্জ আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোম্পানির বাইরে কোনো চায়ের দোকানে দিপু হজরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করেছেন, এমন খবরে কারখানার ভেতরের শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। শ্রমিকেরা দাবি জানান, তাঁকে কারখানা থেকে বরখাস্ত করতে হবে। ওই সময় কারখানার বাইরেও একদল লোক এসে জড়ো হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারখানা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আমরা শ্রমিককে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও কারখানার ভেতরে ও বাইরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি ছিল। উত্তেজিত লোকজন দিপুকে নিয়ে গিয়ে এ ঘটনা ঘটায়।’

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার তিনজনকে আজ দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন। তাঁদের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘র‍্যাব যে সাত আসামি ধরেছে, তাঁদের আমাদের কাছে আজ দুপুর পর্যন্ত হস্তান্তর করেনি। আসামি আমরা পাওয়ার পর তাঁদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেব।’

আরও পড়ুনময়মনসিংহে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা১৯ ডিসেম্বর ২০২৫

নিহত দিপু চন্দ্র দাস প্রায় তিন বছর আগে বিয়ে করেন। তাঁর দেড় বছর বয়সী একটি শিশুসন্তান আছে। উপার্জনক্ষম দিপুকে হারিয়ে অথই সাগরে পড়েছে পরিবারটি। গতকাল শুক্রবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের পর রাত ১০টার দিকে সৎকার করা হয়।দিপুর ভাই ও মামলার বাদী অপু চন্দ্র দাস মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই দুই বছর ধরে কোয়ালিটি সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছিল। আমার ভাইকে কী কারণে মারল জানি না। ওরা বলছে, আমার ভাই ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছে, কিন্তু তার কোনো প্রমাণ নেই। যদি এমনটি বলে থাকে, অপরাধ হয়েও থাকে, তাহলে আইনের মাধ্যমে বিচার হতে পারত। কিন্তু নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। যে সন্ত্রাসীরা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মেরেছে, তাদের বিচার চাই। একই সঙ্গে তার পরিবার কীভাবে চলবে, এ বিষয়টিও দেখতে হবে।’