বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিবাহিনী
প্রকাশিত হয়েছে: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ০৭:৪৯ অপরাহ্ণ
কলকাতায় কর্নেল ওসমানীর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তিনি আমাকে বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে প্রশিক্ষণের জন্য শুধু আওয়ামী লীগের কর্মীদের নেওয়া হবে। আমরা সবাই বললাম, এটা হতে দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়। দেশকে ভালোবেসে প্রাণ বাজি রেখে যারা যুদ্ধ করতে এসেছে, অন্য দল করার কারণে তাদের কাউকে বাদ দেওয়ার অধিকার তো আমাদের নেই।এ কে খন্দকার, বীর উত্তম
দ্বিতীয়বার ফিরে আসার পর মনে হলো, এঁদের মধ্যে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চান, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার। আমি ভেবেছিলাম, কিছু বৈমানিক আমাদের সঙ্গে থাকলে যুদ্ধের কোনো না কোনো পর্যায়ে তাঁদের প্রয়োজন হতে পারে। এর আগে তাঁরা গেরিলা হিসেবে যুদ্ধ করবেন। অনেকে তা করেছেনও। উইং কমান্ডার বাশার আর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রেজার মাধ্যমে আমি বিভিন্নজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দেখা গেল, তাঁরা প্রত্যেকেই আমাদের সঙ্গে যেতে ইচ্ছুক। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নূরুল কাদের সীমান্ত পর্যন্ত গিয়ে আমাদের নিরাপদ পথের সন্ধান নিয়ে এলেন। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটো ভিন্ন পথ দিয়ে আমরা রওনা দিই, যাতে একটি দল ধরা পড়ে গেলেও অন্য দলটি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে পারে। এভাবে আমরা ১৫ মে আগরতলা গিয়ে পৌঁছাই।
আমাদের কাজে একটা প্রবল গতি এল। চুক্তির ঠিক ছয় দিন পর—পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের পরের দিন—আমাদের নৌ-কমান্ডোরা অত্যন্ত সফল অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের অনেক জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। এ ঘটনায় পাকবাহিনীর আত্মবিশ্বাসে সাংঘাতিক চিড় ধরে।এ কে খন্দকার, বীর উত্তম
ভারত আদৌ সাহায্য করবে কি না, তা নিয়েও কারও কারও মধ্যে সংশয় দেখা দেয়। সব মিলিয়ে জুন-জুলাইয়ের দিকে আমাদের কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। মুখে বলা না হলেও ওপরের পর্যায়ে যোগাযোগ থাকার কারণে আমরা কেউ কেউ অবশ্য এ অবস্থার পেছনের কারণটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। তখনো পর্যন্ত ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ প্রকাশ্যে আমাদের পক্ষে ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের প্রতি সমর্থন জানালেও প্রকৃত কোনো সাহায্য-সহযোগিতা তখনো দেয়নি।
আমার সঙ্গে যাঁদের দেখা হতো—জেনারেল অরোরা, জেনারেল জ্যাকব, জেনারেল সরকার—মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে তাঁদের কিন্তু অত্যন্ত উঁচু ধারণা ছিল। তাঁরা স্বীকার করতেন যে মুক্তিবাহিনী খুব কার্যকরভাবে যুদ্ধ করছে। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যে সাহসিকতার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করেছে, সেটা ব্যাখ্যা করে বলা যাবে না।এ কে খন্দকার, বীর উত্তম
মুজিববাহিনী কখনোই আমাদের নেতৃত্ব মেনে নেয়নি। এদের নিয়ে প্রায়ই বেশ সমস্যা তৈরি হতো। তাজউদ্দীন আহমদ ও কর্নেল ওসমানী যে ব্যাপারটি নিয়ে খুব সন্তুষ্ট ছিলেন, তাও নয়। মুজিববাহিনীকে একটি অভিন্ন নির্দেশনার অধীনে নিয়ে আসার জন্য তাঁরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেটা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।এ কে খন্দকার, বীর উত্তম
‘অপারেশনাল ব্লাইন্ডনেস’ বলে যুদ্ধে একটা কথা আছে, যখন প্রতিরক্ষা বা আক্রমণের সময় আপনি জানেন না শত্রুপক্ষ কত শক্তি নিয়ে কোথায় কী অবস্থায় আছে। মুক্তিযোদ্ধারা সত্যি সত্যিই তাদের সে অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল। কারণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ। সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের ভালোবেসেছে; চরম বিপদ মাথায় নিয়ে তাদের থাকা, খাওয়া, চিকিত্সা, তথ্য, গোপন আশ্রয়—সব দিয়েছে। পক্ষান্তরে পাকসেনারা যুদ্ধ করেছে সম্পূর্ণ শত্রু-পরিবেষ্টিত পরিবেশে।
দ্বিতীয়বার ফিরে আসার পর মনে হলো, এঁদের মধ্যে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চান, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার। আমি ভেবেছিলাম, কিছু বৈমানিক আমাদের সঙ্গে থাকলে যুদ্ধের কোনো না কোনো পর্যায়ে তাঁদের প্রয়োজন হতে পারে। এর আগে তাঁরা গেরিলা হিসেবে যুদ্ধ করবেন। অনেকে তা করেছেনও। উইং কমান্ডার বাশার আর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রেজার মাধ্যমে আমি বিভিন্নজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। দেখা গেল, তাঁরা প্রত্যেকেই আমাদের সঙ্গে যেতে ইচ্ছুক। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নূরুল কাদের সীমান্ত পর্যন্ত গিয়ে আমাদের নিরাপদ পথের সন্ধান নিয়ে এলেন। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটো ভিন্ন পথ দিয়ে আমরা রওনা দিই, যাতে একটি দল ধরা পড়ে গেলেও অন্য দলটি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে পারে। এভাবে আমরা ১৫ মে আগরতলা গিয়ে পৌঁছাই।
আমাদের কাজে একটা প্রবল গতি এল। চুক্তির ঠিক ছয় দিন পর—পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের পরের দিন—আমাদের নৌ-কমান্ডোরা অত্যন্ত সফল অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের অনেক জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। এ ঘটনায় পাকবাহিনীর আত্মবিশ্বাসে সাংঘাতিক চিড় ধরে।এ কে খন্দকার, বীর উত্তম
ভারত আদৌ সাহায্য করবে কি না, তা নিয়েও কারও কারও মধ্যে সংশয় দেখা দেয়। সব মিলিয়ে জুন-জুলাইয়ের দিকে আমাদের কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। মুখে বলা না হলেও ওপরের পর্যায়ে যোগাযোগ থাকার কারণে আমরা কেউ কেউ অবশ্য এ অবস্থার পেছনের কারণটা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। তখনো পর্যন্ত ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ প্রকাশ্যে আমাদের পক্ষে ছিল না। সোভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের প্রতি সমর্থন জানালেও প্রকৃত কোনো সাহায্য-সহযোগিতা তখনো দেয়নি।
আমার সঙ্গে যাঁদের দেখা হতো—জেনারেল অরোরা, জেনারেল জ্যাকব, জেনারেল সরকার—মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে তাঁদের কিন্তু অত্যন্ত উঁচু ধারণা ছিল। তাঁরা স্বীকার করতেন যে মুক্তিবাহিনী খুব কার্যকরভাবে যুদ্ধ করছে। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও যে সাহসিকতার সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করেছে, সেটা ব্যাখ্যা করে বলা যাবে না।এ কে খন্দকার, বীর উত্তম
মুজিববাহিনী কখনোই আমাদের নেতৃত্ব মেনে নেয়নি। এদের নিয়ে প্রায়ই বেশ সমস্যা তৈরি হতো। তাজউদ্দীন আহমদ ও কর্নেল ওসমানী যে ব্যাপারটি নিয়ে খুব সন্তুষ্ট ছিলেন, তাও নয়। মুজিববাহিনীকে একটি অভিন্ন নির্দেশনার অধীনে নিয়ে আসার জন্য তাঁরা অনেক চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেটা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি।এ কে খন্দকার, বীর উত্তম
‘অপারেশনাল ব্লাইন্ডনেস’ বলে যুদ্ধে একটা কথা আছে, যখন প্রতিরক্ষা বা আক্রমণের সময় আপনি জানেন না শত্রুপক্ষ কত শক্তি নিয়ে কোথায় কী অবস্থায় আছে। মুক্তিযোদ্ধারা সত্যি সত্যিই তাদের সে অবস্থায় ফেলে দিয়েছিল। কারণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ। সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের ভালোবেসেছে; চরম বিপদ মাথায় নিয়ে তাদের থাকা, খাওয়া, চিকিত্সা, তথ্য, গোপন আশ্রয়—সব দিয়েছে। পক্ষান্তরে পাকসেনারা যুদ্ধ করেছে সম্পূর্ণ শত্রু-পরিবেষ্টিত পরিবেশে।