Daily Ittefaq Daily Ittefaq | সারাদেশ

রাণীনগরে বাড়ছে চুরি-ছিনতাই, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত হয়েছে: ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:৪০ অপরাহ্ণ
রাণীনগরে বাড়ছে চুরি-ছিনতাই, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ
এক সময়ের রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে পরিচিত নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা আবারও অশান্ত পরিস্থিতির দিকে এগোচ্ছে—এমন আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের দৃশ্যমান ভূমিকা না থাকায় উদ্বেগ আরও বাড়ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দিন-দুপুর থেকে সন্ধ্যা—সব সময়েই বাসা ও মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটছে। গত কয়েক মাসে উপজেলায় শতাধিক চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। সচেতন মহলের মতে, বর্তমানে উপজেলায় মানুষসহ কোনো কিছুই নিরাপদ নয়।

সূত্র জানায়, চলতি মাসের ৬ ডিসেম্বর দিনে-দুপুরে উপজেলার মাস্টারপাড়া এলাকার একটি ভবন থেকে চারজন চোর কয়েক মিনিটের মধ্যে লাল রঙের ১৫০ সিসি পালসার মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। পরে সিসিটিভি ফুটেজে চোরদের দেখা গেলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে কিংবা মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করতে পারেনি।

এর আগে গত শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাণীনগর রেলস্টেশনসংলগ্ন রাণীনগর–নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে রাজুর ভেটেরিনারি ওষুধের দোকান থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা চুরি হয়। দোকানের মালিক রাজু জানান, সেদিন তিনি মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য দোকান থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে যান। ফিরে এসে দেখেন ক্যাশবক্সের তালা ভাঙা এবং ভেতর থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা উধাও। পুলিশের কাছে জানিয়ে লাভ হবে না মনে করে তিনি অভিযোগ করেননি। তার ভাষ্য, বর্তমানে যেভাবে চুরি ও ছিনতাই বাড়ছে, তাতে কেউই নিরাপদ নয়।

গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার আবাদপুকুর বাজার মসজিদের সামনে থেকে একসঙ্গে দুটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটে। চুরি হওয়া মোটরসাইকেল দুটি হলো—কালীগ্রাম মুন্সিপুর গ্রামের নাছির উদ্দীন খলিফা ওরফে ভোলার ডিসকভার ১১০ সিসি এবং কালীগ্রাম মরুপাড়া তালপুকুর গ্রামের বাচ্চু সোনার পালসার ১৫০ সিসি। এ ঘটনায় এলাকায় চুরির আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

নাছির উদ্দীন খলিফা জানান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে এশার নামাজ আদায়ের জন্য তিনি রাত সাড়ে ৭টার আগে মোটরসাইকেল রেখে মসজিদে প্রবেশ করেন। নামাজ শেষে বের হয়ে দেখেন তার লাইসেন্স করা মোটরসাইকেলটি নেই। একই সময়ে মসজিদের সামনে থেকে আরেকটি মোটরসাইকেলও চুরি হয়। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

একই রাতে উপজেলার কয়াকুঞ্চি গ্রামের লিবিয়া প্রবাসী আব্দুল মজিদ (মজনু)-এর বাড়িতেও চুরির ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে চোরেরা তার বাড়ির তালা ভেঙে নগদ ৩২ হাজার টাকা, তিন ভরি রূপার গহনা, আধা ভরি স্বর্ণের চেইন, কাঁসার থালা-বাসন, কাপড়, একটি বিদেশি মোবাইল ফোন ও বিদেশি জুতাসহ প্রায় আড়াই লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়।

আব্দুল মজিদ মুঠোফোনে জানান, চার বছর পর তিনি লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন। ওই রাতে গ্রামে বাৎসরিক ইসলামিক জালসা চলছিল। জালসায় খাবার বিতরণ শেষে বাড়িতে ফিরে তিনি দেখতে পান ঘরের তালা ভাঙা এবং পাসপোর্ট ছাড়া সব মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে। রাতের বেলায় এমন ঘটনায় তিনি হতবাক হয়ে পড়েন। পুলিশের কাছে অভিযোগ করে লাভ হবে না ভেবে তিনি বিষয়টি জানাননি বলেও উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ মুঠোফোনে বলেন, মোটরসাইকেল চুরির বিষয়টি তিনি জেনেছেন এবং সেগুলো উদ্ধার ও জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে দোকান ও বাড়িতে চুরির ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।